কেন আপনি স্মার্ট ফোনে আসক্ত? Why you are addicted to your Smart phone2023

 আপনি কেন স্মার্ট ফোনে আসক্ত:

 বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা তার হাতে থাকায় স্মার্টফোনের পেছনে ব্যয় করে। কারো কারো জন্য অংকটা আরো বড়। করোনা মহামারীর আগে পরিস্থিতি বা মানুষ এত বেশি সময় স্মার্টফোনের পেছনে ব্যয় করতো না। যেহেতু করোনা কালীন সময়ে বাচ্চাদের স্কুল কলেজ বন্ধ ছিল অপরদিকে প্রায় সকল ধরনের অফিসও বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে অখন্ড অবসর বেড়েছে আর মানুষ বেশি ঝুঁকেছে হাতে থাকা স্মার্টফোনের দিকে। 

কেন আপনি স্মার্ট ফোনে আসক্ত? Why you are addicted to your Smart phone2023


হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে আপনি কি করেন: 

কেউবা স্মার্টফোনে পাবজি বা ফ্রি ফায়ার এর মতো গেমের নেশায় বুদ হয়ে আছে আবার কেউ কেউ স্মার্টফোনে সারাদিন ইনস্টাগ্রাম,  facebook এর মতো সোশ্যাল মিডিয়াতে পড়ে আছে। আবার অনেকেই আছে যারা ইউটিউব বা টিক টকে একের পর এক কনটেন্ট দেখে চলেছে স্মার্টফোনে। 

Read more GOOGLE NEWS


কি জাদু আছে এই ছোট্ট স্মার্টফোন নামের যন্ত্রটিতে? কেন চোখ সরানো যায় না স্মার্টফোনের স্কিন থেকে? কেন হাত থেকে রাখতে ইচ্ছা হয় না স্মার্টফোন?

কখনো ভেবে দেখেছি আমরা? বাচ্চাদের উপর স্মার্টফোনের প্রভাব সত্যিই আটকে ওঠার মত। ছোট ছোট বাচ্চারা খেলাধুলা,  গল্পের বই পড়া এসব বাদ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টায়ে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। এতে করে তারা বেড়ে উঠছে ঠিকই, কিন্তু তারা বড় হচ্ছে না। ছোট হয়ে আসছে তাদের জগত। পরিপূর্ণভাবে হচ্ছে না সামাজিক এবং মানসিক বিকাশ। 


 আপনি কিভাবে স্মার্ট ফোনে আসক্ত হচ্ছেন:

মূলত এইসব অ্যাপস আর গেমস বানানো হয় এমন ভাবেই যেন আমরা বেশি মাত্রায় এগুলো ব্যবহার করি। এখন আরেকটা প্রশ্ন সামনে এসে যায়। এতে কার কি লাভ? বেশিরভাগ অ্যাপস এবং গেমস ফ্রিতে পাওয়া যায়। তার জন্য টাকা খরচা করতে হয় না। শুধু স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হয়। তাহলে এসব অ্যাপস বা গেমস থেকে ডেভলপাররা টাকা আয় করে কিভাবে? ডেভলপাররা টাকা কিভাবে আয় করে এবার এই বিষয়ে জানব। 


আমরা অনেকেই জানি বিভিন্ন গেমস এ ইন আপ পারচেজ অপশন থাকে। সেখানে টাকা খরচ করে বা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখে বিভিন্ন ভার্চুয়াল জিনিসপত্র কেনা যায়। যেমন ধরুন একশন গেমস এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র কিনতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাপস বিভিন্ন ইউজার এর কাছে থেকে হরেক রকমের ডাটা সংগ্রহ করে। কোন অ্যাপস বলে করে কেউবা চুরি করে তফাৎটা এতটুকুই। পরে ডাটা এনালাইসিস করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। মোটামুটি এই ভাবেই স্মার্টফোনের অ্যাপ থেকে ডেভলপাররা টাকা আয় করে। 


এবার ভাবুন, আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনের সাহায্যে আপনি যদি তাদের অ্যাপস আর গেমসগুলোতে বেশি সময় কাটান তাহলে তাদের আয় হওয়ার সুযোগ বেশি নাকি কম? নিশ্চয়ই আপনার উত্তর বেশি। আর বেশি আয় কে না চায়? প্রশ্ন হল এইসব অ্যাপস বা গেমস আমাদের কাছে এতটা আকর্ষণীয় করা হয় কিভাবে? 


ধরুন কোন একটা কাজের জন্য পুরস্কার দেয়া হলো আপনাকে। নিশ্চয়ই খুশি হবে না আপনি। বেশিরভাগ অ্যাপস বা গেমস এই টেকনিক ফলো করে। গেমসের এই লেভেল পার করতে পারলে কয়েন দেওয়া হবে কিংবা কোন কিছু আনলক করা হবে। কি গেমসে দেখেছেন না এমন? 


সোশ্যাল মিডিয়ার গুলোর দিকে তাকান। আপনার হাতে থাকাই স্মার্ট ফোন দিয়ে আপলোড করা পিকচারে ফ্রেন্ড ফলোয়ারের রিয়াক্ট লাইক কমেন্ট শেয়ার গুলো পেতে কার না ভালো লাগে? অনেকেই তো এমন আছেন যাদের আশা অনুযায়ী রিয়াক্ট না পেলে মন খারাপ করে থাকেন। এই লাইক কমেন্ট শেয়ার ফলোয়ার এইগুলো কিন্তু রিওয়ার্ড। এই রিওয়ার্ড পেলে আমাদের মস্তিষ্কের ডোবা মেন তৈরি হয়। ফলে আনন্দ পাই এবং আরও বেশি রিওয়ার্ড পেতে চাই। এর কারণে, ধীরে ধীরে তৈরি হয় স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি। 


এই স্মার্টফোনের আসক্তি এক সময় পরিণত হয় অভ্যাসে। আবার এই অভ্যাস এক সময় এমন চরমে ওঠে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটিভ না  থাকতে পারলে আমাদের অসস্তি হয়। স্মার্ট ফোন হাতের কাছে না থাকলে মনে হয় "না জানি কত কিছু মিস করে ফেলেছি"। একদিন সোশ্যাল মিডিয়া না আসতে পারলে মনে হয় পুরো দুনিয়া থেকে পিছিয়ে গিয়েছে। এইভাবে ধীরে ধীরে আমরা পরিণত হই স্মার্টফোন জঙ্গিতে। 


মানুষের প্রবৃত্তি এমন যে, সেসব জিনিস তাদের বেশি আকর্ষণ করে যার প্রতি তার আগে থেকে কোন ধারণা নেই। ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে অনেক সময় রিফ্রেস করে নেই। এটা আমরা কেন করি? সহজ কথায় নতুন কনটেন্ট পাওয়ার আশায়। আমাদের কিন্তু জানা থাকে না রিফ্রেস করার পর কি ভেসে উঠবে আমাদের স্মার্টফোনের স্ক্রিনে। একটু আগেই বলেছি, সেসব জিনিস আমাদের বেশি আকর্ষণ করে, যার ব্যাপারে আগে থেকেই কোন ধারণা নেই। তার জন্যই আমরা ক্রল এবং রিফ্রেশ করি। 


আবার অনেক সময় এমন হয় যে, ইউটিউব এ একের পর এক ভিডিও দেখেই চলেছেন। একটু খেয়াল করলে দেখবেন এর পিছনে অনেকটাই দায়ী ইউটিউব এর অটো প্লে এবং সিমিলার ভিডিও রেকমেন্ডেসন। একটা ভিডিও শেষ হওয়ার পর ওই টপিকের অন্য ভিডিও প্লে হয়ে যাচ্ছে। ফলে আপনার ইচ্ছার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। সিমিলার ভিডিও আপনার সামনে আসলে আপনি তা দেখছেন। এভাবে একের পর এক ভিডিও দেখেই চলেছেন সময় কিভাবে কেটে যাচ্ছে আপনি টেরও পাচ্ছেন না।


 এবার ধরুন আপনি স্মার্টফোনটি রেখে অন্য কোন কাজ করছেন। কাজের মধ্যেও স্মার্টফোনটি যাতে আপনি হাতে নেন সেই কৌশল ও করা রয়েছে। বিভিন্ন অ্যাপস থেকে বিভিন্ন সময়ের নোটিফিকেশন পাঠায়। তার সাউন্ড আপনার কানে যাবে। তখন আপনি নোটিফিকেশন চেক করার জন্য স্মার্ট ফোন হাতে নিবেন। 


এবার আপনি বলবেন, এ নোটিফিকেশনগুলো তো আমার প্রয়োজনীয় তাহলে সমস্যা কোথায়? হ্যাঁ কিছু নোটিফিকেশন রয়েছে যা প্রয়োজনীয়। সর্বপ্রথম Black Berry ফোনে যখন নোটিফিকেশন আনা হয়, তখন তার উদ্দেশ্য ছিল বারবার ইমেল যে করার ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া। 


তবে এখন উদ্দেশ্য পাল্টে গেছে। এখন অনেক অ্যাপস এমন নোটিফিকেশন দেয় যা আপনার দরকার নেই। বরং নতুন ভাবে অ্যাপস এ ঢুকতে তাগিদা দেয়। যেমন ধরুন ইউটিউব এর নতুন ভিডিও নোটিফিকেশন, ফেসবুক এর পোস্ট এর নোটিফিকেশন এছাড়াও খেয়াল করলে দেখবেন, বেশিরভাগ অ্যাপসই জমকালো ডিজাইন আর কালারফুল। এর কারণ, বোল্ড এবং ব্রাইড যেকোনো জিনিসই সহজেই আমাদের নজর করে। ঠিক এই কারণেই গুগল ইন্সটাগ্রাম সহ অনেকেই তাদের পুরনো সাদামাটা লোগোতে এনেছে পরিবর্তন।


সময় নষ্ট হওয়া, চোখের ক্ষতি হওয়া, সময় মতো ঘুম না হওয়া স্মার্টফোনের আসক্তির এই সব ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নিশ্চয় অবগত আপনি। এইসব না হয় বাদই দিলাম। এক গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত স্মার্টফোন আসক্তির ফলে, আমাদের মস্তিষ্ক সংকুচিত হয়ে থাকে।  ঠিক যেমনটি হয় মাদক আসক্তদের ক্ষেত্রে।   এর ফলে আমাদের যৌতিক চিন্তাভাবনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে ধীরে ধীরে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আর তার প্রভাব ফেলে আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে। 


আমাদের এই ইয়ং জেনারেশন সোশ্যাল মিডিয়ার খপ্পরে পড়ে সত্তিকারের সামাজিক জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এমনটি বন্ধুদের আড্ডায় দেখা যায়, শরীরটা আড্ডায় আছে ঠিকই কিন্তু চোখ আর মন রয়েছে স্মার্টফোনের ডিসপ্লে তে। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ফেসবুকের একজন এক্সিকিউটিভ দাবি করেছিলেন যে, সোশ্যাল মিডিয়া সমাজকে ধ্বংস করছে। তিনি তার বাচ্চাদের এইসবের সংস্পর্শে আসতে দিবেন না। উনার কথার যৌথিকতা উপলব্ধি করতে পারছেন কি?


স্মার্ট ফোন আসক্তি তো বড় এক ধরনের সমস্যা কিন্তু এই মায়াজাল থেকে বের হব কিভাবে?

সর্বপ্রথম আপনার করণীয় হল কোন কোন অ্যাপস আপনার প্রয়োজনীয় এবং কোন কোন এপস আপনার অপ্রয়োজনীয়তা আলাদা করা। 

সম্ভব হলে অপ্রয়োজনে এপ্স গুলো একেবারে আনইন্সটল করে দেওয়া। আর আনইন্সটল করা সম্ভব না হলে তার নোটিফিকেশন অফ করে রাখুন। 

এই অ্যাপসগুলো হোমস্ক্রিন থেকে সরিয়ে ফেলুন। 

কিছু অ্যাপস আছে যেগুলো হয়তো প্রয়োজনীয়, কিন্তু সব সময় লাগে না। সেগুলোর নোটিফিকেশন অফ করে রাখুন। 

এছাড়া কিছু reminder অ্যাপ রয়েছে সেগুলোকে আগে থেকে সেট করে রাখলে বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে থাকলে বা গেমস খেলে রিমাইন্ড দেবে আপনাকে। 

ইউটিউব ভিডিও দেখার সময় অটো প্লে ফিচার বন্ধ রাখুন। 

প্রতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাপস থেকে বের হবার আগে লগ আউট করুন। এতে পরবর্তীতে লগইন করে একাউন্টে ঢুকতে হবে। বারবার লগইন করার ফলে সোশ্যাল মিডিয়াতে কম ঢুকবেন আপনি। 

সবচেয়ে বড় কথা হল এগুলোর কোন কিছুই ফল আপনি পাবেন না, কারণ যদি আপনি নিজে থেকে স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে বেরিয়ে না আসতে চান।  তাই প্রথমে আপনাকে স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। তবেই আপনি স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url