শামসুর রহমান / Shamsur rahman summary 2023

 

শামসুর রহমান / Shamsur rahman summary 2023


কবি পরিচিতি: বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ আধুনিক কবি শামসুর রহমান ১৯২৯ সালের, ২৩ অক্টোবর, পুরান ঢাকার মাহুতটুনীতে জন্মগ্রহণ করেন। Shamsur rahman date of birth 

তার পিতার নাম মুখলেছুর রহমান চৌধুরী এবং মায়ের নাম আমেনা বেগম। Shamsur rahman father's name and mother's name


শামসুর রহমানের পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলীতে। শামসুর রহমানের ডাক নাম বাচ্চু। কবি শামসুর রহমান ঢাকার পোগোজ ইংলিশ স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ এবং এম.এ প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু তিনি এম.এ শেষ পর্বে অংশগ্রহণ করেননি। শামসুর রহমান পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। Shamsur rahman birthday 


কর্মজীবন: শামসুর রহমান রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে দৈনিক মর্নিং নিউজ এর সম্পাদক ১৯৫৭ দৈনিক পাকিস্তানের সহকারি সম্পাদক ১৯৬৪ এবং দৈনিক বাংলার সম্পাদক ১৯৭৭ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭৭ সালের সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক হন। এছাড়া শামসুর রহমান ভারতের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি লাভ করেন। শামসুর রহমান বাংলাদেশের প্রধান নাগরিক কবি। পাকিস্তান সরকারের ভাষা বৈষম্য ও রোমান হরকত চালু করার প্রস্তাবের তিনি রচনা করেন "বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা"। Shamsur rahman biography in Bengali 


সাহিত্যকর্ম:

 কাব্যগ্রন্থ: শামসুর রহমানের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৬৫ টি। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ গুলো হল- প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে (১৯৬০), রৌদ্র করোটিতে (১৯৬৩ ), বিধ্বস্ত নীলিমা (১৯৬৭),  নিরালোকে দিব‍্যরথ (১৯৬৮),  নিজ বাসভূমে (১৯৭০),  বন্দি শিবির থেকে (১৯৭২), ফিরিয়ে নাও ঘাতকবাঁটা (১৯৭৪), আমি অনাহারি (১৯৭৬), বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে (১৯৭৭), উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ (১৯৮২), বুকে তার বাংলাদেশের হৃদয় (১৯৮৮), শামসুর রহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা। Shamsur rahman poems


শিশুতোষ কাব্য: এলাটিং বেলাটিং (১৯৭৫), ধান বানলে কুঁড়ো দেবো (১৯৭৭), স্মৃতির শহর (১৯৭৯), লাল ফুলকির ছড়া (১৯৯৫)।


উপন্যাস: শামসুর রহমানের উপন্যাসের সংখ্যা চারটি। অক্টোপাস (১৯৮৩), অদ্ভুত আঁধার এক (১৯৮৫), নিয়ত মন্তাজ (১৯৮৫), এলো সে অবেলায় (১৯৯৪)।


স্মৃতি কথা: স্মৃতির শহর (১৯৭৯), কালের ধুলোয় লেখা (২০০৪)।


পুরস্কার: কবি শামসুর রহমান আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯১) লাভ করেন। এছাড়া সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য জাপানের "মিত্সুবিশি" পুরস্কার (১৯৯১) এবং ভারতের আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। Shamsur rahman death


বারবার ফিরে আসে কবিতাটি শামসুর রহমানের একটি জনপ্রিয় কবিতা। বারবার ফিরে আসে কবিতাটির সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হল : প্রতিভাবান কবি  শামসুর রহমান বাংলাদেশের নাগরিক কবি হিসেবে খ্যাত। কবি কর্মের অনন্য ফসল " বারবার ফিরে আসে" কবিতাটি কবির  "দুঃসময়ে মুখোমুখি" কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এটি বাংলাদেশের অগ্নিঝরা এক অস্থির সময়ের পটভূমিতে রচিত। দেশাত্ববোধক এ কবিতায় কবি ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যেসব আন্দোলন সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে তার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং তথ্যচিত্র বর্ণনা করেছেন। 

Shamsur rahman stats

আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করছি তা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জন করতে হয়েছে। কবি আলোচ্য কবিতায় সেই রক্তাক্ত স্মৃতিকে স্মরণ করেছেন। কবি এ কবিতায় অংকন করেছেন রক্তে ভেজা শহীদদের শার্ট, শত্রুর পদদলিত রক্তে রঞ্জিত রাজপথ। 


১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্ত হবার পর পাকিস্তানের শাসক চক্র আমাদের দেশের উপর চেপে বসেছিল। তারা অর্থনীতিকে গ্রাস করেছিল। ভাষা এবং সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র করেছিল নানা উপায়ে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম বাঙালির রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। ১৯৫২ সাল থেকে থেকে রক্তের ক্ষরণ শুরু হয়ে ১৯৭১ এ তা পূর্ণতা পায়। তাই বাঙালির ইতিহাস রক্তে রঞ্জিতের ইতিহাস। এ রক্তাক্ত স্মৃতি "বারবার ফিরে আসে" কবিতার মূল উপজীব্য।


 এদেশে ছাত্র সমাজ পাকিস্তানের শাসন শোষণের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সালে রক্ত ঝরিয়েছিল। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে ছয় দফা মুক্তির সনদ প্রণীত হয়। আর এ ছয় দফার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৬৯ সালে। এ আন্দোলনে প্রথম শহীদ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ। আসাদের রক্তমাখা শার্ট বাঙালির চেতনায় সারা ফেলে। ফলে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড আক্রোশের গর্জে উঠে বীর বাঙালি। বিদ্রোহের প্রতীক এর শার্ট, ভাঙার গান গাওয়া প্রতিবাদীদের আদর্শের প্রতীক। যুগে যুগে এই শার্ট দেয় মানুষকে অনুপ্রেরণা। সংকটে, সংঘাতে,সংগ্রামে এ শার্ট মানুষের বুকে আসার বাণী শোনার।


আসাদের এ রক্তমাখা শার্ট বারবার ফিরে এসেছে বাংলার মাঠঘাট, শহর -বন্দর এবং রাজপথের দিশারী হয়ে।  রক্তমাখা শার্টের রক্তের আভা লাল পতাকা হয়ে মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়েছে রাজপথ। শহীদদের এ রক্তের ঋণ শোধ করতে শহীদ মিনারে মানুষ কাতারে কাতারে মিলিত হয়েছে। তাই রক্তমাখা শহীদদের শার্ট বারবার ফিরে আসে। 


স্বাধীনতার চেতনার নেশায় কত মা কত সন্তান হারিয়েছে। এক মায়ের চোখের অশ্রু না শুখাতেই আরেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। কতশত বধুর সংসার গোরস্থানে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য পিতাকে নিজের পুত্রের কবর খুঁড়তে হয়েছে। গৃহবধূদের বৈধব্য, মায়েদের কান্না এবং পিতাদের হাহাকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়েছে বরাবর।


 আমাদের কে ওরা মাঠে চেয়েছিল। গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছিল আমাদেরকে। আমাদেরকে দাশে পরিণত করতে চেয়েছিল চিরদিন। কিন্তু বিয়ের বাঙালি জীবনকে বিসর্জন দিয়ে স্বাধিকার আদায় করেছে। অর্জন করেছে প্রিয় স্বাধীনতা। তাই  লক্ষ শহীদদের রক্তে ভেজা শার্ট এদেশের আকাশে বাতাসে বারবার ফিরে এসেছে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url